Banarasi Saree বিয়েতে কেনো পরা হয়?

বেনারসি শাড়ি হচ্ছে ভারতীয় একটি শহর বেনারস এ তৈরি একপ্রকার শাড়ি। এ শাড়িগুলো সোনা এবং রূপার কিংখাব বা জরি, সূক্ষ্ম রেশম এবং আকর্ষণীয় সূচিকর্মের জন্য বিখ্যাত হয়েছে। এই বেনারসি শাড়ির অন্যতম উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জড়ানো ফুল ও পাতাযুক্ত নকশা পাড়ের বাইরের অংশে ঝাল্লর নামে ওপর দিকে ওঠা পাতার একটি ঝাড়।

বিয়ে বাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন জমকালো অনুষ্ঠানে শাড়ি হিসেবে বেনারসির তুলনাই নেই। মা,নানীদের বিয়ে থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত বেনারসি শাড়ির কদর এখন কমেনি। কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই বেনারসি শাড়িটি ঘিরে।

বিয়েতে প্রায় সবার নজর থাকে কনের দিকে। সে কেমন শাড়ি পরেছে এবং সাজগোজ কেমন হয়েছে। একজন নারীর মনে বিয়েকে ঘিরে থাকে তার নানা স্বপ্ন। কিন্তু বিয়ের দিন যখন ঘনিয়ে আসে, তখন সেই স্বপ্ন পূরণের সঙ্গে মানসিক চাপও তাকে ঘিরে থাকে।

বিয়ের পোশাক হিসেবে প্রথম স্থান থেকে বেনারসিকে কেউ সরাতে পারবে না। এক কথায় মেনে নিতেই হবে বিয়ের শাড়ি মানেই হচ্ছে বেনারসি শাড়ি। আজকাল ততোটা ভারী বেনারসির চল নেই বললেই চলে। তাই হালকা কাতান সিল্কের ওপর সুন্দর কাজ করা বেনারসি শাড়ি তৈরি করা হচ্ছে।

বিয়ের শাড়ির মধ্যে বেনারসি শাড়ি সব সময় বাঙালি নারীদের পছন্দের পোশাক। প্রায় প্রতিটা অনুষ্ঠানে নারীরা বেনারসি শাড়ি পরে থাকেন। বিয়ে এমন একটা বিশেষ দিন যা বার বার আপনার জীবনে আসবেনা। বিয়ের কনে হবে তাজা গোলাপের মতো দেখতে সতেজ এবং সুন্দর। সেখানে কোনও খুঁত থাকবে না, এবংকি দাগও থাকবে না। দেশে হাজার হাজার শাড়ির দোকান আছে,এবং  লক্ষ লক্ষ অনলাইন সাইট আছে সেখান থেকে সব জায়গা থেকে আপনি বেনারসি শাড়ি কিনতে পারবেন।


কিন্তু প্রশ্ন হতে পারে বিয়েতে কেনো বেনারসি শাড়ি পরা হয়?

যেহেতু সবাই বিয়েতে বেনারসি পছন্দ করে তাই এ প্রশ্ন আসতেই পারে। তবে এর উত্তর মেলে না। এমনকি কবে থেকে এই বেনারসি শাড়ি বিয়ের শাড়ি হিসেবে ব্যবহার শুরু করেছে, সেটাও আমাদের কা্রোর  জানা নেই। তবে কোন একসময় সোনার জরি ব্যবহার করা হতো এই শাড়ির বুননে রেশমের সঙ্গে । সে জন্যই এই শাড়িকে তখন সবাই পবিত্র শাড়ি মনে করতেন। এ ছাড়া বিয়ে হচ্ছে সবার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এর সঙ্গে রয়েছে ধর্মীয় আচার ও রীতিনীতি। তাই এটি পবিত্র। এ জন্যই হয়তো বিয়েতে বেনারসি শাড়ি ব্যবহার হয়ে আসছে বলে অনেকে ধারণা করেন। তবে বাঙালি বিয়ের জন্য সবাই আজো বেনারসি শাড়ি খোঁজে থাকেন। বিশেষ করে, লাল বেনারসি শাড়ি। এটা যেন আমাদের সবার পরম্পরার একটি অংশ হয়ে গেছে।


বেনারসি শাড়ি সব সময়েই সিল্ক সুতায় বোনা হয়ে থাকে। তবে জমিনে বুননের সময় অলংকরণের জন্য রুপা ও সোনার জরি এবং মিনা করার জন্য অন্য সুতা বা জরি ব্যবহার করা নহয়ে থাকে। মার্সেরাইজড কটন বা গ্যাস সিল্ক সুতা দিয়ে ও সিল্ক সুতা ব্লেন্ড করেও উন্নত মানের বেনারসি বোনা যায় । এ ছাড়া আরো তৈরি করা হয় কটন বেনারসি, স্বর্ণকাতান ইত্যাদি। বর্তমানে বেনো জলের মতোই ঢুকছে নানান ধরনের কৃত্রিম সুতা যা দিয়ে শাড়ি বুনন করে।সে জন্য বর্তমানে আসল বেনারসি পাওয়া মুশকিল। এখনো এই বেনারসি শাড়ির জমিন নকশা হাতে সুতা ঘুরিয়েই করা হয়ে থাকে।

আমাদের দেশে টেক্সটাইল ডিজাইনারের খুব অভাব। যার ফলে বেনারসি তাঁতিরা ভারতের বেনারস শহর থেকেই বিভিন্ন সময়ে ডিজাইন নিয়ে আসেন। কিংবা তারা সরাসরি শাড়ি এনে সেটাই ফের তৈরি করে থাকেন। তবে বর্তমানে ডিজাইন আগের চেয়ে অনেক উন্নত ও বৈচিত্র্যময় হয়েছে। কিন্তু পুরোনো ডিজাইনের কদর এখনও কমেনি। এখনো বিয়েতে একটা বেনারসি শাড়ি সব মেয়েরাই প্রত্যাশা করে থাকেন। যদিও ডিজাইন করার মতো দক্ষ শিল্পী পাওয়া বর্তমানে খুবেই কঠিন হয়ে পরছে।

যেহেতু আজকাল ভারী বেনারসির চল খুব একটা নেই। তাই বর্তমানে হালকা কাতান সিল্কের ওপরই সুন্দর কাজ করা বেনারসি শাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। বেনারসি শাড়ির কুঁচি এবং আঁচলে থাকছে জমকালো কাজ। এ ছাড়া বেনারসিতে ফ্লোরাল কাজ, বালুচরির কাজ, জ্যামিতিক নকশা, কনট্রাস্টিং পাড়  ইত্যাদিত থাকছে। জর্জেটের ওপর স্টোনের কাজ করা বেনারসি শাড়ি বেশ জনপ্রিয় পাচ্ছে। আজকাল অনেকেই কনট্রাস্টিং রঙের ব্লাউজ পরতে দেখা যাচজাচ্ছসে জন্য নতুন ধরনের বেনারসি শাড়িতে থাকছে বিপরীত রঙের মিশ্রণের কাজ। দামও সাধ্যের মধ্যে পাবেন। বিয়ের পর বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং নিমন্ত্রণ রক্ষার জন্য কিছু ভালো বেনারসি  শাড়ি নিজের কালেকশনের মধ্যে রাখুন। গর্জাস লুকের জন্য রাখতে পারেন নানা ধরনের সিল্ক, জামদানি, অরগ্যানজা, বালুচরি শাড়ি, পৈঠানি, চান্দেরি, ঘিচা, জামেওয়ার। আর যদি হালকা জমির শাড়ি চান, তাহলে বেছে নিতে পারেন সিল্ক, টিস্যু, বেনারসি, শিফন, মসলিন, রেশমি কটন শাড়ি। বর্তমানে হ্যান্ডলুমের তৈরি শাড়ি খুবেই জনপ্রিয়।