সুতি শাড়ি পরতে আরাম লাগার কারন কি?

আমরা বাঙ্গালী, আর বাঙালী নারীর পোশাক মানেই শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ।তবে যে পোশাকই পরা হোক না কেন কাপড়ের ক্ষেত্রে সুতির কোন বিকল্প নেই। সুতির পোশাক অত্যন্ত আরামদায়ক হয়। সব ঋতুতেই সুতি কাপড় পরা যায় । তাছাড়া সুতি কাপড়ের পোশাক পরলে যে কোন নারী- পুরুষের মাঝে একটি মার্জিতভাব প্রকাশ পায়। আর সুতি কাপড়ের আরেকটি বড় সুবিধা হচ্ছে এটি সহজলভ্য।


সুতি সুতা মূলত প্রাকৃতিক তন্তু  দিয়ে তৈরি করা। আর এগুলো আসে কার্পাস তুলা, রেশম গুটি ইত্যাদি উপাদান থেকে।কার্পাস তুলার বীজ এবং রেশম গুটি থেকে তন্তু গুলোকে আলাদা করে নানা রকম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয় সুতা। প্রাথমিক অবস্থায় এটি খুব নরম হয়। পরে স্পিনিং ও নিটিংয়ের মাধ্যমে এ সুতা মজবুত ও মসৃণ করা হয়।

এই মসৃণ সুতা দিয়েই বোনা হয় সুতি কাপড়। এর সঙ্গে কিছু প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক উপাদানের মিশ্রণে তৈরি হয় ফ্লানেল, লিনেন, এন্ডি প্রভৃতি কাপড়। আর এগুলোকে বলা যায় সুতির বিবর্তিত রূপ। আমাদের দেশের তৈরি করা সুতি কাপড়ের জুড়ি মেলা-ভার। কিন্তু মিসরে যে সুতি কাপড় নীল-নদের উপত্যকায় তৈরি করা হয় সেটাকে বলা হয় সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের সুতি কাপড়।

গরমে যাতে শরীরে সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে এবং ঘাম শুষে নিতে পারে এমন শাড়ি পরা উচিত আমাদের সবার। আর তাই গরমে সুতি শাড়ি আরামদায়ক। আবার অনেকের ধারণা সুতি শাড়ি বুঝি সাবেকি ঘরানার। তবে সুতি শাড়ি ঐতিহ্যবাহী কিংবা সাবেকি ঘরানার ঠিকই, কিন্তু একই সঙ্গে সুতি এ শাড়ি দারুণ স্টাইলিশও বটে। যুগ যুগ ধরে সুতি শাড়ি তার রঙ-রূপ পাল্টেছে কিন্তু এর কদর এখনও কমেনি।

গরমের জন্য অনেকেই চান শাড়ি এড়িয়ে চলতে । সেক্ষেত্রে আপনাকে আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্যের সমাধান দিতে পারে একমাত্র সুতি শাড়ি। ব্লাউজের ক্ষেত্রে হাতায় কোল্ড শোল্ডার কাটে ভিন্নতা আনতে পারেন, আরাম দেবে ম্যাগি হাতাও খুব। লেইস, ফ্রিল বা কুচি সহযোগে সম্পূর্ণ শাড়ির লুকটাই বদলে দিবে আপনাকে। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজের পাশাপাশি ঘন সুতার কাজের কুর্তি, টিউনিক এমনকি পশ্চিমা ধাঁচের টপও বানিয়ে নিতে পারেন আপনি।


গরমের সময়ে সুতি শাড়ির আবেদন যেন একটু বেশি।কারণ এটি খুবেই আরামদায়ক। প্রচন্ড গরমে সুতি শাড়ি দেহে ও মনে স্বস্তি এনে দেয়। আজকাল আমাদের ফ্যাশন হাউজগুলোতেও সুতি শাড়ির প্রাধান্য লক্ষণীয়। ফ্যাশন হাউসগুলো সময়ের চাহিদাকে মাথায় রেখে তৈরি করছে বিভিন্ন ডিজাইনের কালারের সুতির শাড়ি। আজকাল আবার সুতি শাড়ির ওপর দেশাত্ববোধকে ফুটিয়ে তুলতে এসব হাউসগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

সুতি শাড়ি শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে এবং ঘাম শোষণ করে নেয় খুবেই সহজে। তাছাড়া গরমে ঘামাচি, চুলকানি, অ্যালার্জির মতো সমস্যাও দেখা দেয়। যাদের প্রতিদিন বেরোতে হয় অফিসে বা কাজের জন্য, তারা দিব্যি সারাদিনের স্বস্তির জন্য বিশ্বাস রাখতে পারেন সুতি শাড়ির ওপর। দিনের বেলায় হলুদ, গোলাপি, বেগুনির মতো গাঢ় রঙের পাশাপাশি বিভিন্ন প্যাস্টেল শেডগুলোও ভালো লাগবে আপনাকে।

সুতি শাড়ির সঙ্গে স্নিগ্ধ একটি সাজ বেছে নিতে পারেন। গরমে চুল ছেড়ে না রেখে বেঁধে রাখ

লেই বেশি ভালো লাগবে আপনাকে। আর ভারী মেকআপ এড়িয়ে চলুন। বৈচিত্র্য আনতে পড়তে পারেন গহনা। সুতি শাড়ি বলেই যে সব সময় সাদামাটা গহনা পরতে হবে তা কিন্তু ঠিক নয়। মাটি, ধাবত,কাঠ, মেটাল, কুন্দন, পুঁতি, স্টোন, গোল্ড, পার্লসহ প্রায় সব ধরনের গহনাই মানিয়ে যায় সুতি শাড়ির সঙ্গে। ফিউশন গহনাতেও আপনি আনতে পারেন বৈচিত্র্য। বিয়ের দাওয়াতে চওড়া সোনালি পাড়ের সাদা সুতির শাড়ির সাথে সোনার গয়না পরে নিলেও কাতান বা যে কোনো শাড়ির চেয়ে কম জমকালো দেখাবে না।

এ মৌসুমে সুতি শাড়ি পরতে খুবেই আরাম লাগে।এ সময় নকশার শাড়ি বেছে নেয়াই ভালো। এ ক্ষেত্রে আপনি একরঙা জমিন, চিকন পাড় আর হালকা নকশার আঁচলের শাড়ি বেছে নিতে পারেন। হালকা প্রিন্ট বা জলছাপ, বাটিক বা ব্লকের শাড়িও এ সময় আরামদায়ক দেয়। অনুষ্ঠান বা রাতের আয়োজনে ভিন্ন কিছু পরতে চাইলে অনায়াসে পরে নিতে পারেন সুতির মিশ্রণে তৈরি সিল্ক তাঁত, হাফ সিল্ক সুতি কিংবা সুতি জামদানি শাড়ি।

সবসময় গরমে গাঢ় রঙ এড়িয়ে চলুন। এ সময় চাঁপা সাদা,সাদা, লেমন, হালকা গোলাপি, হালকা হলুদ, হালকা বেগুনি, ঘিয়া, বাদামি, আকাশীর মতো যে কোনো হালকা শেড পরলে একটা স্নিগ্ধভাব আসবে আপনার ভিতর। এতে দিনভর সতেজ ও স্বাচ্ছন্দ্যে থাকা যায়।

শীতে যেমন মোটা সুতি শাড়ি আরামদায়ক তেমিন গরমে পাতলা সুতি শাড়ি স্বত্বিকর। তাই আসুন সুতিতে অভ্যস্ত হই।