বেনারসি শাড়ি কেনার ক্ষেত্রে কি খেয়াল রাখা উচিত?

বেনারসি শাড়ি হচ্ছে ভারতীয় একটি শহর বেনারস এ তৈরি একপ্রকার শাড়ি। এ শাড়িগুলো সোনা এবং রূপার কিংখাব বা জরি, সূক্ষ্ম রেশম এবং আকর্ষণীয় সূচিকর্মের জন্য বিখ্যাত হয়েছে। এই শাড়ির অন্যতম উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জড়ানো ফুল ও পাতাযুক্ত নকশা পাড়ের বাইরের অংশে ঝাল্লর নামে ওপর দিকে ওঠা পাতার একটি ঝাড়।

বিয়ে বাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন জমকালো অনুষ্ঠানে শাড়ি হিসেবে বেনারসির তুলনাই নেই। মা,নানীদের বিয়ে থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত বেনারসি শাড়ির কদর এখন কমেনি। কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই বেনারসি শাড়িটি ঘিরে। যেহেতু বেনারসি শাড়ির অনেক দাম।তাই শাড়ি কিনার আগে পকেট বুঝুন। তারপর গায়ের রঙ দেখে শাড়ি কিনুন।

সঠিক শাড়ি খুঁজতে গেলে সঠিক শাড়ি বুঝতেও হবে। বেনারসি শাড়ি চেনার উপায় জানা না থাকলে, শাড়ি কিনে ঠকার সম্ভাবনা ১০০%। বেনারসির কিন্তু অনেক রকমের ফ্যাব্রিক, প্যাটার্ন, ডিজাইন ও জরির কাজ হয়। তাই শাড়ি কিনার আগে আমাদের আসল বেনারসি শাড়ি চিনতে হবে



বেনারসি শাড়ি চেনার উপায়

* বেনারসি শাড়ি চিনার জন্য শাড়িটি উলটে দেখলেই হবে। কেননা আসল বেনারসি শাড়ির উল্টা পাশে ঘন সুতা দেখা যায়, যেটা নকল বেনারসি শাড়িতে দেখা জায়না।

* আসল বেনারসি শাড়ির আচলে সবসময় ৬-৮ ইঞ্চি মাপের লম্বা সমান সিল্কের প্যাচ থাকে, যেটা নকল বেনারসি শাড়িতে থাকে না। শাড়ি পড়ার পর এই অংশটি কাঁধের উপর দিয়ে পড়ে, তাই এটি খুব সহজেই দেখা যায়।

* বেনারসি শাড়ি সবসময় খুব উন্নতমানের জরি সুতা ও সিল্ক সুতা দিয়ে তিরি করা হয়। এই জরি সুতা সোনালি বা রুপালি রঙের হয়ে থাকে। এই সব সুতা খুব দামি হয় তাই এসব শাড়িও খুব দামি হয়।আর এসব শাড়ি তৈরি করতে একজন তাঁতির ১ সপ্তাহ থেকে ১ মাস সময় লেগে থাকে।

* বেনারসি শাড়ি সাধারনত সিল্ক এর সুতা দিয়ে তৈরি করা হয়। তাই কিনার আগে দেখতে হবে সুতাটি আসল সিল্ক কিনা সেটা যাচাই করতে হবে। শাড়িটি হাতে নিয়ে ঘষা দিয়ে দেখতে হবে তাতে গরম অনুভব হয় কিনা।তাহলে বুঝা যাবে আসল বেনারসি শাড়ি।

* আসল শাড়ি বুঝার জন্য রিং টেস্ট করা যেতে পারে। খাটি সিল্ক এর শাড়ি খুব সহজেই একটি আংটির ভিতর দিয়ে প্রবেশ করা যায়।যেটা নকল শাড়িতে সম্ভব নয়।

* আসল বেনারসি শারিতে মোঘল মোটিফ থাকবে,যেমন আম্রু, আমবি,দোমাক যেটা নকল বেনারসি শাড়িতে থাকবে না।

* খাটি সিল্ক চেনার জন্য সিল্ক কে আগুনে পুড়িয়ে পরীক্ষা করতে পারেন। আগুনে পড়ালে কাপড় থেকে চুল পোড়া গন্ধ বের হবে। আর এর ছাই হবে কালো এবং ধরার সাথে সাথে গুড়া হয়ে যাবে।




বাজেট বুঝুন

বেনারসি শাড়ি কেনার আগে প্রথমেই যেটা মাথায় রাখতে হবে সেটি হচ্ছে বাজেট। অর্থাৎ বেনারসির জন্য কত টাকা বরাদ্দ করেছেন। ১টা অরিজিনাল বেনারসি শাড়ি পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে কয়েক লক্ষ টাকার বেনারসি পাওয়া যায় বাজারে। তাই নিজের পকেট বুঝে তবেই শাড়ি কিনবেন। কেননা বেনারসি আলমারিতে ঢুকলে সহজে বেরোয় না। আর যদি আপনি নিজে চাকুরে হন তবে মনের খুশিতে লাখ টাকার শাড়ি কিনতে পারেন।




গায়ের রঙ

আপনার রঙ যদি ফ্যাকাসে হয় তাহলে সফট সোনালি, গোলাপি,হলুদ ও পিচের হাল্কা শেড পরতে পারেন। আর যদি ফর্সা হয় তাহলেতো কথাই নাই  যে কোনও উজ্জ্বল রঙ যেমন লাল, হলুদ ও নীল এ আপনাকে দিব্যি মানাবে।

আর যদি শ্যামবর্ণ বা জলপাইয়ের মতো গায়ের রঙ হয় তাহলে একটু মেটালিক শেড বা ব্রিক রেডের মতো ঘন রঙ বেছে নিতে পারেন। আর যে বেনারসি পছন্দ হবে সেটা দিনের বেলা দেখে এলেও রাতেও একবার দোকানে গিয়ে দেখে আসবেন। কেননা অনেক সময় চড়া আলোর বিচ্ছুরণে রঙ পাল্টে যায়।


আপনি এবং অবশ্যই আপনি

শাড়িটা তো আর কোন তিনতালার দাসবাবুর মেয়ে পরবে না।পরবেনতো আপনি। তাই আপনার ভালো লাগাটা প্রথমে দেখবেন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ঠাণ্ডা মাথায় দেখুন। কি দেখছেন আয়নায়? আপনাকে লম্বা ও ছিপছিপে দেখা যাচ্ছে ? তাহলে চোখ বুজে চওড়া পার,জমকালো, বড় ডিজাইন এবং ব্রাইট রঙের বেনারসি কিনুন। আর যদি উল্টোটা হয়, অর্থাৎ আপনি উচ্চতা যদি কম হয় এবং চেহারা যদি গোলগাল হয় তাহলে হাল্কা রঙের সরু পারের লম্বালম্বি ডিজাইনের বেনারসি কিনুন।

মনে রাখবেন শাড়ি পরবেন আপনি, তাই আপনার কাছে আপনাকে যেভাবে ভাল লাগে এবং যেই শাড়িটি পছন্দ হয় সেই শাড়িটিই কিনবেন।