ঘাঘরা চোলি(ghagra choli) একপ্রকারের পোশাক, যা ভারত ও পাকিস্তানের পাঞ্জাব অঞ্চলের নারীরা পরিধান করে থাকে।
ঘাগরার নিচে সুথান অথবা সালোয়ার পরিধান করা হয়, পাঞ্জাবের ঐতিহ্য। পূর্ব পাঞ্জাবে এবং লাহোর শুধুমাত্র বাইরে যাওয়ার জন্য সুথান অথবা সালোয়ার ব্যবহার করতো। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্য গ্রামে যাওয়ার সময় কুর্তা অথবা কুর্তির বদলে চোলি পরিধান করার চল ছিল তখন।
তখন প্রথম সন্তানের বিয়ে না হওয়া অবধি পাঞ্জাবী মহিলাদের বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত ঘাগরার নিচে সুথান অথবা সালোয়ার পরার চল ছিল। উৎসব কিংবা শ্রাদ্ধবাড়িতে ঘাগরা পরে যাওয়ার রীতি ছিল তখন। বর্তমানে বৃদ্ধা মহিলারা এখনও এই পোশাক ব্যবহার করেন এবং বিশেষ অনুষ্ঠানে পরিধান করে থাকেন। ইংল্যান্ডে বসবাসকারী বৃদ্ধা পাঞ্জাবী মহিলারা এই ঘাগরার নিচে সুথান অথবা সালোয়ার পরার কথা স্মরণ করতে পারেন।
১৯৬০ সালে এই ঘাগরা ব্যবহারের ব্যাপী ছিল পশ্চিম এবং পূর্ব পাঞ্জাবের বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে। কিন্তু পরবর্তীকালে ঘাগরা তার কৌলিন্য হারিয়ে ফেলে এবং পাঞ্জাবী সালোয়ার সুট জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু পূর্ব পাঞ্জাবের কিছু গ্রামাঞ্চলে অন্তোষ্টিক্রিয়াকর্ম উপলক্ষে এই ঘাগরার প্রচলন এখনো আছে। হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা এবং পশ্চিম পাঞ্জাবের কিছু অংশে এখনো ঘাগরার ব্যবহার দেখা যায়।
ঘাগরা চোলি (ghagra choli) বা লেহেঙ্গা চোলি একটি ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় পোশাক যা গুজরাট এবং রাজস্থান রাজ্যে নারীরা পরিধান করে। পোশাকটি টাইট-ফিটিংযুক্ত থাকে। এর উপরিভাগে সমৃদ্ধ সূচির কাজ করা থাকে যা হাতা ছাড়িয়ে বা না ছাড়িয়ে নাভির উপরে পৌঁছায়। এটিতে একটি দীর্ঘ স্কার্ট বা লেহেঙ্গা এবং একটি ব্লাউজ থাকে যা দিয়ে ঘাড়, মাথা বা বুক ঢাকা যায়। পুরো পোশাকটি বেশ বর্ণিল দেখতে। এর উপরের অংশগুলি প্রায়শই জোড়াতালি দিয়ে তৈরি করা হয়। যেখানে অনেক সময় দেখা যায় আয়না লাগানো থাকে। কখনও কখনও তাতে সোনালি জরির দারুণ কাজ করা থাকে।
এই পোষাকটা ভারতের বহু প্রদেশের নারীরা পরে থাকেন। যেমন গুজরাট, রাজস্থান, জম্মু, উত্তর প্রদেশ ,মহারাষ্ট্র , মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, বিহার ইত্যাদি । বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন নাম আছে যদিও সেগুলো আমার জানা নেই। এই পোষাকটা হলো নারীদের ঘরোয়া পোষাক। সবাই মোটামুটি ঘিরেই এ পোশাক পরে থাকেন। সাধারণত এই পোশাক সূতি কাপড় দিয়েই বানানো হয়, তবে সিল্কের কাপড় দিয়েও বানানো হয় যাতে আশেপাশে বেরোতে হলে পরে বেরোনো যায়।
এই ঘাগরা টি কোমরে বাঁধতে হয়। বেশ কুচির ঘের থাকে এই পোশাকে। পুরো কোমর ঘুরে ঘুরে কুচিগুলো পড়ে থাকে। ঘাগরার কোমর সাধারণত দড়ি দিয়ে বাঁধতে হয় ( অনেকটা প্রচুর ঘেরওয়ালা সায়ার মতো ) আবার অনেকে হুক দিয়েও পরে থাকে। ওপরে একটা ব্লাউজ থাকে। অনেকে ব্লাউজটা কোমর অব্দি লম্বাও পরে আবার ছোটো করে পরে। হরিয়ানাতে ঘাগরার ওপর একটা কলার দেওয়া শার্ট পরে। সাথে থাকে একটা ওড়না।
ঘাগরা চোলি তিন অংশে বিভক্তি। একটি ঘাগরা,এটি বেশ কুচির ঘের হয়ে থাকে। আর এর কোমর সাধারণত দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়।অনেক টা ঘেরওয়ালা সায়ার মতো। আর এক অংশের নাম চোরি, এটি ঘাগরার ওপরের অংশে পরে ব্লাউজ এর মত। আর একটা হচ্ছে ওড়না(দোপাট্টা)। এটি ঘাগরা চোলির উপরে পরে।সাধারনত মহিলারা এই ওড়না(দোপাট্টা) মাথায় ব্যাবহার করে থাকে। এবং শরীর এই ওড়না(দোপাট্টা) দিয়ে ঢেকে রাখে।
ঘাগরা চোলি আর লেহেঙ্গা প্রায় একই রকম, তবে ঘাগরা সাধারণত মহিলারা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করেন থাকেন। জিনিসটা সুতি কাপড়ের হয়ে থাকে, কোনো ভারী কাজ থাকে না এটিতে। লেহেঙ্গা হল ঘাগরার রকম এরই এবং এটি তৈরী করা হয় ১৮৭৮সালের তথ্য অনুযায়ী ঘাগরার থেকে উৎকৃষ্ট দ্রব্য দিয়ে। শহরতলি অঞ্চলে লেহেঙ্গা জনপ্রিয় ছিল এবং পাঞ্জাবী কনেরা এই লেহেঙ্গা বিয়েতে ব্যবহার করে থাকে।
পোশাকের বহুমুখিতাটি মহিলাদের তাদের নিজস্ব ব্যক্তিত্বের কাছে অনন্য করে তুলতে দেয় ঘাঘরা চোলি । আপনার কাছে পুরোপুরি আসল এমন কিছু তৈরি করতে ঘাঘরা চোলি দিবে এক অনন্য রুপ।
শাড়ি দক্ষিণ, পশ্চিম ও পূর্ব ভারতের বিবাহের পোশাক হিসেবে এগিয়ে আছে। তবে উত্তর ভারতের বধূরা লেহেঙ্গা, ঘাগড়া চোলি ও ওড়নাকে বিয়ের পোশাক হিসেবে পছন্দ করেন।
ছোট ঝুলের ঘাগরাকে ঘাগরী বলা হয়,এর ঘাগরার মতো পা এর গোড়ালি অবধি লম্বা হয় না। এই ঘাগরীর প্রচলন ছিল হিমাচল এবং হরিয়ানা প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, কিন্তু ১৯৬০ সালের সময়কাল থেকে এই পোশাকটি জনপ্রিয়তা পেতে থাকে। পাঞ্জাবে এখনো এই পোশাকের প্রচলন রয়েছে তবে অন্তরমহলে।